ঠিকানা
ঠিকানা,
প্রথম যখন তোমায় হারিয়েছি তখন আমি স্কুলে পড়ি।
তোমার বাবার চাকরির ট্রান্সফারে
শুধু তোমাদের ঠিকানা বদল হয়নি
বদল হয়েছিল আমার সাইকেলের রোজ বিকেলের ঠিকানা।
ঠিকানা, এটাই প্রথম নয় যখন তোমায় হারিয়েছি।
বাবা মারা যাওয়ার পর যখন ভিটেমাটি দখল হয়েছিল
তখন প্রথমবার তোমায় হারিয়ে ছিলাম।
থাক সে কথা।
তুমি চলে যাওয়ার পর
আমার নতুন ঠিকানা হয়েছিল স্কুলের আজাদ হোস্টেল।
চলে যাওয়ার সময় ঠিকানা বলে না গেলেও
তোমার মামাতো ভাই আকাশের ঠিকানা পেয়ে ছিলাম
তোমার, ক্লাসে হারিয়ে যাওয়া "বৃষ্টির ঠিকানা" বই থেকে।
এরপর, অনেকদিন ভালো থেকেছি,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখেছি।
ঠিকানা ঠিক কি ঠিকনা জানা ছিলনা।
গত পনেরো দিন ধরে এখন আমার ঠিকানা বন্ধুর মেস।
মাসের মাঝপথে ঢাকায় থাকার জায়গা জোগাড় না করতে পেরে
বন্ধুর থাকার জায়গায় ভাগাভাগি করে থাকি।
আমি এখন কর্মজীবী প্রাণী, একজন ডেলিভারি ম্যান।
মানুষের ঠিকানায় বই পৌছে দেয়াই আমার কাজ।
"বৃষ্টির ঠিকানা" বই নিয়ে আকাশের ঠিকানায় গিয়েছিলাম,
আকাশের দেখা পাইনি।
এখনো প্রতিদিন আমার সাইকেল ঠিকানা খুঁজে বেড়ায়, হাজার মানুষের ঠিকানা।
একদিন বই ডেলিভারি করতে গিয়ে তোমার দরজায় কড়া নেড়ে ছিলাম।
ঠিকানা শুনে তুমি বললে, "আপনি ভুল ঠিকানায় এসেছেন"।
হ্যাঁ, সেদিন আমি ভুল ঠিকানায় গিয়েছিলাম।
কিন্তু আমি আমার ঠিকানা চিনতে ভুল করিনি,
শুধু এক মুহূর্তের জন্য আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সেদিন আমি আমার নাম, পরিচয়, ঠিকানা বলতে পারিনি,
আমারতো ঠিকানাই নেই।
আজ সকালে,
আমার কোন বই ডেলিভারি না থাকা সত্বেও আমি আমার সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলাম।
আমার সাথে একটি বইও ছিল।
হ্যাঁ, "বৃষ্টির ঠিকানা"।
বইয়ের ভিতরে ছিল আকাশের ঠিকানা।
কিন্তু আমি আকাশের ঠিকানার দিকে যাচ্ছিলামনা।
যাচ্ছিলাম একটি ভুল ঠিকানায়।
কিন্তু কোথা থেকে একটি পিকআপ এসে
আমি আর আমার সাইকেল কে আলাদা করে দিল।
যতক্ষণ জ্ঞান ছিল ঘাড় ঘুরিয়ে সাইকেল খুঁজেছি, পাইনি।
যখন আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল
তখনো একটি পরিচিত মুখ বলছে "আপনি ভুল ঠিকানায় এসেছেন"।
এখন আমি একটি কাঠের তৈরি কাঠামোতে শুয়ে আছি এবং আমি চলমান।
কিন্তু আমি হাঁটছি না, বা কোন যানবাহনে চড়ছিনা।
আমাকে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন অপরিচিত মানুষ।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমি জানিনা।
আবার মনে হচ্ছে ঠিকানাটা আমার পরিচিত।
এবার বোধহয় আমি আমার চিরস্থায়ী ঠিকানা পেতে যাচ্ছি।
Comments
Post a Comment